স্টাফ রিপোর্টার: পাটকেলঘাটার ধানদিয়া ইউনিয়নের কুটিঘাটা বাজারে ধানদিয়া সাংস্কৃতিক পরিষদের উন্নয়নকল্পে আলোচনা সভা, আদি যাত্রাপালা, নারী ও শিশুদের জন্য প্লাস্টিকের পুতুল নাচ, মৃৎশিল্পসহ নানাবিধ খেলার অনুমতি নিয়ে গত ১০ই ফেব্রুয়ারী শুরু হয়েছে ৭দিন ব্যাপী কৃষি মেলা।
প্রথম দিন অতিবাহিত হতে না হতে জেলা প্রশাসনের দেওয়া অনুমতির অপব্যবহার করে সেখানে চলছে আদি যাত্রার পালার স্থানে নগ্ন শরীর প্রদর্শন, অশালীন অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন, নারী ও শিশুদের জন্য প্লাস্টিকের পুতুল নাচ স্থানে চলছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত নর্তকীদের অর্ধ উলঙ্গ নাচ, বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার স্থানে চলেছে বিভিন্ন ধরনের অবৈধ জুয়া খেলা, যার মধ্যে আছে ওয়ানটেন, চরকা, বউ চোর, চিংড়ী মাছ খেলা যেগুলো শুরু হয় রাত থেকেই। মেলা ঘুরে দেখা যায় নামে কৃষি মেলা কিন্তু সেখানে কৃষির কোন উপকরণ প্রদর্শণী নেই। জেলা প্রশাসনের কড়া নজরদারির থাকা সত্বেও গভীর রাতে মেলা কমিটি আয়োজন করে অন্য রকম আয়োজন।
ধানদিয়া ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ রাতের এই নগ্ন মেলার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গভীর রাতে জুয়াড়ীর দল মোটা অংকের টাকা নিয়ে জুয়া খেলতে আসছে। এছাড়া এলাকার কিছু চিহ্নিত জুয়াড়ীরা জুয়া খেলে কিছু লোককে সর্বশান্ত করে নিজেদের আখের গোছাচ্ছে। অনুষ্ঠানের পাশে আম বাগান থাকায় জুয়াড়ীদের পোয়াবারো হয়েছে। সেখানে সারারাত চলেছে বিভিন্ন ধরনের অবৈধ জুয়া খেলা। আদি যাত্রাপালা, জাদু প্রদর্শন ও প্লাসটিকের পুতুল নাচের নামে চলছে যুবতী মেয়েদের অশ্লীল নাচ এতে উঠতি বয়সের যুবকরা বিপথগামী হয়ে পড়ছে বলে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।
মেলায় অশ্লীল নৃত্য ও জুয়া খেলার ছবি যাতে কেউ মোবাইল ফোনে ভিডিও করতে না পারে সেজন্য কঠোর তদারকিতে রয়েছে আয়োজক কমিটির পেটুয়া বাহিনী। কেহ ভিডিও বা ছবি তুলতে গেলে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে তার মোবাইল ফোন।
অপর দিকে মধ্যরাত পর্যন্ত উচ্চস্বরে গান বাজানোই, ঐ এলাকার আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের মাঝে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। মেলা কমিটি ধানদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাচীর ও সাইকেল সেড নিমর্মানের নামে এমন ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে স্কুলের কমলমতি শিশুদেরই ক্ষতি সাধন করছে। মেলা শুরুর ১ম দিন থেকেই এধরনের নগ্ন নাচ জুয়া খেলার অভিযোগ পাওয়া যায়।
মেলা দেখতে আসা রইচ উদ্দীন সরদার জানান, বিভিন্ন জায়গার মেলায় গিয়েছি উন্মক্তভাবে জুয়া খেলা ও অশ্লীলতা ভরা নাচ আমি কোথাও দেখিনি। এ বিষয়ে ধানদিয়া সাংস্কুতিক পরিষদের কাছে থেকে চুক্তিতে নেওয়া মাঠ মালিক মাদারীপুরের রাসেল হোসেন জানান, সাংবাদিক ও স্থানীয় নেতাদের ম্যানেজ করে সব কিছু চালাচ্ছি। তারা টাকা নিচ্ছে মানে আমাকে বৈধতা দিয়েছে। এখানে কোন সমস্যা দেখছিনা। আমি মাঠ কিনেছি লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে আর এসব না করলে টাকা উঠবেনা। আমি তো আর লোকসান করবো না, তাই না? পাটকেলঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার রায় বলেন, মেলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সেখানে কোন অবৈধ কিছু হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অসামাজিক কিছু চলতে দেওয়া হবে না।
নেজারত ডেপুটি কালেক্টর সাতক্ষীরা বাপ্পী দত্ত রনি বলেন, জুয়া খেলা বা অশ্লীল নৃত্যের ছবি বা ভিডিও দেন ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) ও তালা উপজেলা কমিশনার ভূমি রুহুল কুদ্দুস বলেন, আমি এ বিষয়ে তো কিছু জানিনা। এখন শুনলাম আগামীকাল সেখানে যাবো তার পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।
তালা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম বলেন, আমি আগে থেকেই জানতাম অনৈতিক কর্মকান্ড হবে যার কারনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমি যায়নি। এধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া উচিত।
তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার বলেন, আমি ঢাকায় আছি বিশেষ কাজে। তবে মেলার বিষয়ে যা শুনছি এমনটা হলে আমি তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অনুরোধ জানাচ্ছি।
ধানদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমি জরুরী কাজে ঢাকায় আছি এমন মেলা যাতে আমার ইউনিয়নে না হয় সেজন্য ডিসি মহাদয়কে অনুরোধ করেছি। আমি রাতেই এলাকায় ফিরে ব্যবস্থা নিবো। এছাড়া বিভিন্ন দফতরে ইউনিয়ন বাসীর পক্ষ থেকে এধরনের অনৈতিক মেলা বন্ধের জন্য দরখাস্ত করা হবে।
স্থানীয় ৭নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের নাম দেওয়া হয়েছে কিন্ত তারা কেহ আসেনি। আর এধরনের সমাজের অবক্ষয় করার জন্য এক শ্রেণীর দুষ্টচক্র তৎপর রয়েছে। আমি এ ধরনের অসামাজিক কাজের বিরোধীতা করি। এ ধরনের সমাজ বিরোধী চক্রের হাত থেকে সমাজকে রক্ষা করার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে স্থানীয় সুশীল সমাজ।
ধানদিয়ায় চলেছে জুয়া ও অশ্লীল নৃত্য: অসামাজিক মেলা বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা
